![]() |
ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ |
দরুদ শরিফ পাঠে আল্লাহর দরবারে ইবাদতের বিনিময় সুনিশ্চিত হয়। বড় বড় বুযুর্গরা বলেন, দুরুদ আবশ্যকীয় কবুল বিষয়। একারণে বুযুর্গরা বলতে প্রত্যেক দোয়ার আগে পরে দুরুদ পড়, যেন তোমার দোয়ার আগে পড়ে আবশ্যকীয় কবুল বিষয় থাকার কারণে মাঝের দোয়াও আল্লাহ কবুল করে নেবে।
রাসূল্লাহ (সা.) এর নাম উচ্চারণ করলে বা শুনলে দরুদ পড়া ওয়াজিব। কোনো আলোচনায় বা লেখায় নবীজির (সা.) নাম উচ্চারণ করা হলে বা পাঠ করা হলে লেখক, পাঠক, শ্রোতার জন্য অন্তত একবার নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। একই বৈঠকে বা লেখায় একাধিকবার নবীজির নাম আলোচিত হলে একবার দরুদ বলা ওয়াজিব, আর একাধিকবার দরুদ পড়া মুস্তাহাব।
এ ছাড়া যেকোনো সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্য দোয়া করা, দরুদ পড়া সব সময়ই অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।
রাব্বুল আলামি আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে নবীজির (সা.) জন্য সালাত ও সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا
অর্থ: ‘নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোয়া করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর প্রতি দরুদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’। (সূরা: আহজাব, আয়াত: ৫৬)
অনেকগুলো হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জন্য বেশি বেশি দরুদ পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার জন্য একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন’। (সহিহ মুসলিম)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বার্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহর জন্য দরুদ পাঠকারী কেয়ামতের দিন তার কাছে থাকবে। রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন লোকদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আমার অধিক নিকটতম হবে, যে ব্যক্তি আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে’। (সুনানে তিরমিজি)
আমের ইবনে রাবিআ (রা.) বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) খুতবায় বলতে শুনেছি, কোনো মুসলমান যতক্ষণ আমার ওপর দরুদ পাঠ করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। বান্দারা এটা জেনে তাদের দরুদ পাঠ কমাতে পারে বা বাড়াতে পারে! (মুসনাদে আহমদ, সুনানে ইবনে মাজা)
আল্লাহর কাছে যেকোনো দোয়া করার সময় রাসূলুল্লাহর জন্যও দোয়া করা, তার প্রতি দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব।
দরুদ পাঠ করার পর দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ দরুদ পড়লে আল্লাহ তাআলা খুশি হন। তার ক্ষমা ও রহমত বর্ষিত হয়।
সাহাবিরা তাদের দোয়ায় দরুদ পাঠ করতেন। ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা আপনাদের নবীর প্রতি দরুদ না পাঠান ততক্ষণ দোয়া আকাশ ও জমিনের মধ্যে ঝুলে থাকে, এর থেকে কিছুই ওপরে ওঠে না। (সুনানে তিরমিজি)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আপনারা যখন দোয়া করবেন, তখন প্রথমে আল্লাহর উপযুক্ত প্রশংসা ও গুণগান করুন, তারপর নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠ করুন, তারপর যা প্রার্থনা করতে চান তা প্রার্থনা করুন। এ রকম দোয়া কবুল হওয়ার জন্য বেশি উপযোগী। (তাবরানি)
কাব ইবনে ওজারা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি আমরা কীভাবে দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, বলো- اللهم صلي علي محمد وعلي أل محمد، كما صليت علي إبراهيم وعلي أل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك علي محمد وعلي أل محمد كما باركت علي إبراهيم وعلي أل إبراهيم، إنك حميد مجيد
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ; কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ; আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ-কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ’।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার বংশধরদের ওপর এমন রহমত নাজিল করো, যেমনটি করেছিলে ইব্রাহিম (আ.) ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার বংশধরদের ওপর বরকত নাজিল করো, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহিম (আ.) ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানীয়’। (বোখারি ও মুসলিম)
ডেইলি-বাংলাদেশ/জিআর
0 Comments