১০ টাকায় ১ মাসের জন্য ২ জিবি ডাটার প্রস্তাব

বাংলাদেশের শীর্ষ চার মোবাইল অপারেটর। অলংকরণ: ডেইলি বাংলাদেশ



দেশে ব্রডব্যান্ডের মতো মোবাইল ইন্টারনেটের দাম সরকারিভাবে নির্ধারণের প্রস্তাব জানিয়েছেন স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর কর্তা ব্যক্তিরা। তাদের মতে, সব অপারেটরের উচিত ১০ টাকায় ১ মাসের জন্য ২ জিবি ডাটা অফার করা। অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন লেয়ার তুলে নেয়া ও ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়ার জন্য বিটিআরসিকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।  


সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওতে বিটিআরসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এই দাবি জানানো হয়। বিকাশমান টেলিযোগাযোগের শক্তিতে বাংলাদেশের ডিজিটাল সেবার সম্প্রসারণ নিয়ে ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিউনিকেশন (বিটিআরসি)। 



বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারীর সভাপতিত্ব গোলবেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার মো. খলিল উর রহমানের সঞ্চালনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কমিশনার ও পরিচালকরা ছাড়াও মোবাইল অপারেটর ও ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।



গোলটেবিল আলোচনায় দেশের বিকাশমান ডিজিটাল সেবা উদ্যোগ, বিডিজবস, চালডাল, টেন মিনিটস স্কুল, পাঠাও, শেয়ার ট্রিপ, শপআপ, প্রাভা হেলথ, সহজ, শিখো, ই-কুরিয়ার, পিকাবো, সেবা এক্সওয়াইজেডের প্রতিষ্ঠাতারা উপস্থিত ছিলেন।



সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘ইন্টারনেটের মূল্য অনেক বেশি। ড. ইউনূস বিভিন্ন খাতে সংস্কারে আগ্রহী যেখানে টেলিযোগাযোগ খাতও রয়েছে। আইসিটি বিভাগে ২১টি প্রকল্প চলছে, যেখানে ডাটা সেন্টারের মতো কাজও রয়েছে। এ সময়ে ডাটাই মূল জিনিস। তবে ডাটা ইউনিফরমিটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’



নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ খাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী।



মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এমএফএস আর্থিক সেবা দেয়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এটার দেখভাল করে। আবার এমএফএসগুলোর কাজ হয় টেলকো এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তাহলে এগুলো কে দেখবে? বিটিআরসি না অন্য কেউ? এভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মাঝে কোনো সমন্বয় নেই, সেই সমন্বয় দরকার। সমন্বয়হীনতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এখন সময় এসেছে, আমাদের দরকার জয়েন্ট রেগুলেশন।’



মূল প্রবন্ধে চালডালের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ওয়াসিম আলিম জানান, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারে পিছিয়ে আছি। ভারত বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় সাত গুণ বড়। এই অবস্থার উন্নয়নে ডেটা বা ইন্টারনেট ব্যবহারের বিকল্প নেই। ডেটার ব্যবহার অবকাঠামো খরচ বাঁচায়। শিক্ষা অর্জনকে সহজতর করে কর্মহীনদের কর্মক্ষম করে তোলে। তাই ডেটার ওপর কোনো বাধা থাকা উচিত নয়।



তিনি বলেন, ১২৫ কিলোবাইট ডেটা ব্যবহার করার পরিবর্তে কেউ যদি মাসে ১ জিবি ডেটা ব্যবহার করে তবেই তাকে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য করা উচিত। ভারতে ১০ মিনিটে ১ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও বাংলাদেশ এই সংখ্যায় অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ১০০০ গুণ বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ডেটার দাম বেশি হওয়ার কারণে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই সবগুলো মোবাইল অপারেটরের উচিত ১০ টাকায় ১ মাসের জন্য ২জিবি ডেটা অফার করা। এজন্য অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন লেয়ার তুলে নেয়া ও ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া দরকার।



বিডিজবস প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, গুগল, ফেসবুক ও আকামাই যেন দেশে আসে সে জন্য কন্টেন্টের দায় শুধু কন্টেন্টদাতার ওপর রাখতে হবে। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হোক এনটিটিএন। বিগত সময়ে যেসব প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দিয়ে জায়ান্ট করা হয়েছে তাদের বিষয়ে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।



সভায় অন্যদের মাঝে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ, শেয়ারট্রিপের প্রতিষ্ঠাতা সাদিয়া হক, এডটেক প্রতিষ্ঠান ‘শিখো’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শাহির চৌধুরী, পিকাবুর প্রধান নির্বাহী মোরিন তালুকদারসহ বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


Post a Comment

0 Comments