![]() |
ফারজানা আক্তারছবি: সংগৃহীত |
শুক্রবার বেলা দেড়টা। বাড়ির পুরুষেরা জুমার নামাজে ব্যস্ত। এই সুযোগে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে প্রাইভেট কারে তুলে একটি বাছুর (গরু) চুরি করে পালাচ্ছিল সংঘবদ্ধ একটি চোর চক্র। টের পেয়ে চোরদের প্রথমে বাধা দেন মা। ক্ষিপ্ত হয়ে চোরেরা তাঁকে মারধর করে। মায়ের চিৎকারে ছুটে এসে চোরদের গাড়ির সামনে দাঁড়ান মেয়ে ফারজানা আক্তার। চোরের দল ১৯ বছর বয়সী ওই কলেজছাত্রীকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করে বাছুরটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
গত শুক্রবার নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট তালতলা-আটগ্রাম সড়কের রায়কোট নতুন বাজার এলাকায় আয়েশা মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরদিনই থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত ফারজানার বাবা আবদুল কাদের। ঘটনার সপ্তাহ ঘুরলেও ঘাতকেরা এখনো অধরা।
তরুণীকে চাপা দিয়ে হত্যার পর পালানোর সময় চোর চক্রের গাড়িটি এলাকার কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে। এরপরও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষকসহ এলাকাবাসী। তাঁরা দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
নিহত ফারজানা আক্তার রায়কোট গ্রামের নতুন বাজার-সংলগ্ন এলাকার আবদুল কাদেরের মেয়ে। তিনি উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাদশা মিয়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গত মঙ্গলবার ফারজানা হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। তবে তাঁরা ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সংগ্রহ করেছেন। এতে পালিয়ে যাওয়া গাড়িটি দেখা গেলেও নম্বর বোঝা যাচ্ছে না। তাঁদের তদন্ত চলমান। আশা করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে খুনি চোর চক্রকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
ফারজানা হত্যার বিচারের দাবিতে শিক্ষক–সহপাঠীদের মানববন্ধন। গত মঙ্গলবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে
ফারজানা হত্যার বিচারের দাবিতে শিক্ষক–সহপাঠীদের মানববন্ধন। গত মঙ্গলবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটেছবি: সংগৃহীত
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুরে কাদেরের বাড়িসংলগ্ন আয়েশা মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সামনে কালো রঙের বাছুরটি বাঁধা ছিল। জুমার নামাজের সময় লোকজন নামাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে তিন থেকে চারজনের একটি চোরের দল বাছুরটিকে প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। কাদেরের স্ত্রী আছমা বেগম টের পেয়ে বাধা দিলে চোর চক্র তাঁকে মারধর করে। মায়ের চিৎকার শুনে মেয়ে ফারজানা বাড়ি থেকে বের হয়ে চুরি ঠেকাতে গাড়ির সামনে দাঁড়ান। চোর চক্র তাঁকে গাড়িচাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে ঘটনাস্থল থেকে চার কিলোমিটার দূরে পাশের পেড়িয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে চোখ বাঁধা অবস্থায় চুরি হওয়া বাছুরটি পাওয়া যায়।
ফারজানার মা আছমা বেগম বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে পিংকী (ফারজানা) সবার বড়। মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও সাহসী। ভেবেছিলাম কয়েক মাস পর বিয়ে দিয়ে দেব। আমার সেই মেয়ে এখন কবরে। আমি খুনিদের বিচার চাই।’
এক সপ্তাহ হলেও খুনিরা শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাবা আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘চোরের দল আমার ফুটফুটে মেয়েটাকে নৃশংসভাবে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু ঘাতকেরা এখনো ধরা পড়ল না। পুলিশ খুনিদের শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেনি। আমরা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।’
ফারজানার শিক্ষক খন্দকার মুশফিকুল হক বলেন, ফারজানা অনেক মেধাবী ছিলেন। এসএসসির মতো এইচএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল করবে বলে তাঁরা আশাবাদী ছিলেন। ঘাতকেরা মেয়েটার জীবনপ্রদীপ কেড়ে নিল। দিনদুপুরে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনায় তাঁরা দ্রুত খুনিদের শনাক্ত ও বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে সামনে কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।
0 Comments