ঋতু পরিবর্তনে বাড়ছে বিভিন্ন রোগ

লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন রোগীরা




দুপুরে কড়া রোদের সঙ্গে কখনো ভ্যাপসা গরম। আবার পরক্ষণেই গা শিউরানো ঠান্ডা-অনুভূতি। সন্ধ্যার ঝরছে কুয়াশা। সকালে গাছের ডাল-পালা থেকে শুরু করে কখনো কখনো সড়কও ভিজছে। প্রকৃতিতে এই পরিবর্তন জানান দিচ্ছে শীত। আর ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে রাজশাহীতে সর্দি-কাশি-জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এমন অবস্থায় সকলকে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে অবস্থিত মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ উপজেলার হাসপাতালেও আবহওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের চাপ বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে শিশু রোগীদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।



সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করেই মানুষ সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। থাকছে মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, হাঁচির মতো লক্ষণ। কারও কারও কাঁপুনি নিয়ে জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করছে। শারীরিক দুর্বলতাও দেখা দিচ্ছে। ডায়রিয়াসহ অ্যাজমা রোগীরা বেশি ভুক্তভোগী বলে জানা গেছে।



রোগী ও স্বাজনরা বলছেন, পরিবারে একজনের জ্বর হলে তার সংম্পর্শে থাকা অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন লক্ষণ নিয়ে রাজশাহীতে ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। যেটিকে আবহওয়া পরিবর্তনজনিত শারীরিক সমস্যা হিসেবেই দেখছেন আক্রান্তরা। অনেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে উঠছেন। আবার অনেকে জটিলতা নিয়ে জরুরি বিভাগেও ভর্তি হচ্ছেন।



রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, গত কয়েকসপ্তাহ ধরে পর্যায়ক্রমে পরিবারের চার সদস্য জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। একজন সুস্থ হওয়ার পর আরেকজন আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে আমার মেয়েটার বয়স একবছর ছয়মাস। তার বেশকিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে ভালো না হওয়ায় পরে রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ হয়েছে। এখন আমার শাশুড়ি অসুস্থ। পরিচিত এক ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন।



রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, আবহওয়ার পরিবর্তনের সময় ফ্লু এর প্রকোপ বাড়ে। এবারও বেড়েছে। সতর্ক থাকার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের অ্যাজমা, হাঁপানি, ব্রংকিওলাইটিস ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এসময়টাই ফলমূলসহ গরম খাবার বেশি খেতে হবে। শরীরে শক্তি যোগায় এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। আর জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।



রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শঙ্কর কে বিশ্বাস বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ অ্যাজমার রোগী সংখ্যা বাড়ছে। বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ দুই জায়গাতেই রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা রোগীদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।



রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ বলেন, আমাদের রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে অস্বাভাবিক হারে রোগী বাড়ছে। আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।


Post a Comment

0 Comments