![]() |
দুপচাঁচিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ |
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর পাঠদানসহ সব কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে গেছে। এতে ৪৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ফলে তারা দুশ্চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবনযাপন করছেন।
জানা যায়, গত ২০১৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজ্জাত আলীর প্রচেষ্টায় বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সহযোগিতায় উপজেলা সদরের সোনারপট্টি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ভবনস্থ মার্কেটে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজটি স্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মরহুম আব্দুর রাজ্জাকসহ কিছু শিক্ষিত তরুণ যুবক-যুবতীদের প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির শুরুতেই কেজি ওয়ান থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
এরই মাঝে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৯ জন শিক্ষক কর্মচারীর অনুদানের অর্থ থেকে চৌধুরীপাড়ায় পালপাড়া সড়কের ধারে সাড়ে ৭২ শতক জমি কিনে একতলা পাকা টিনশেড ১০ কক্ষবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
সোনারপট্টি থেকে চৌধুরীপাড়ায় নতুন ভবনে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে নবম-দশম ও ভোকেশনাল শাখায় পাঠদানের অনুমোদন লাভ করে। কলেজ শাখায় পাঠদানের অনুমোদনের আবেদনও করা হয়।
এরই মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রমসহ সব কার্যক্রমে প্রায় স্থবিরতা নেমে আসে। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাঝে দেখা দেয় হতাশা।
অনিশ্চিত অভিষ্যতের কথা ভেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নান্টু কুমার বর্মণসহ অনেকই প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। অনেকেই আবার তাদের অনুদানের অর্থ ফেরত নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে ধর্না দিচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, শিক্ষক-কর্মচারীরা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হবে এমনই আশা নিয়েই বিনা বেতনে প্রায় ৭ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রম দিয়ে আসছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো আয়ের উৎস না থাকায় এইসব শিক্ষক কর্মচারীদের কোনো সম্মানি ভাতা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাথমিক শাখায় ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫ জন ও মাধ্যমিক শাখায় ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, এমপিওভুক্তির আশায় তারা ৭ বছর ধরে বিনা বেতনে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাশ নিচ্ছেন। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা করুণ। ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার কথা ভেবে অনুদানের টাকা ফেরত পেতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজ্জাত আলী জানান, প্রতিষ্ঠানটি সরকারি কোনো অনুদান ছাড়াই সম্পূর্ণ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের অনুদানের অর্থের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুদানের প্রাপ্ত ৯৬ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৭২ শতক জমি কেনা হয়েছে ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা, দলিলে ৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে।
এছাড়া ভবন নির্মাণের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেলাল হোসেনকে ২৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর আলীকে ৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। তাদের বিল ভাউচারের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন, যোগ করেন সুজ্জাত আলী।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেনা, নাইট গার্ডের বেতনসহ সর্বমোট ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ২১ লাখ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা হয়ে আসছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও স্বল্পসময়ে তা কেটে যাবে বলেও আশা করছেন সুজ্জাত আলী।
0 Comments